ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে অন্তত ৬৫ অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ জনই বাংলাদেশি। আর জীবিত উদ্ধারকৃত ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনই বাংলাদেশি।
বেঁচে যাওয়া এসব বাংলাদেশি নিজের চোখের সামনে অন্যদের ডুবে যেতে দেখেছেন।
উদ্ধার হওয়ার পর বার্তা সংস্থা এএফপিকে ভয়াবহ সেই নৌকাডুবির বর্ণনা দিয়েছেন তারা।
তারা বলছেন, আমাদের বাঁচাতে আল্লাহ তিউনিসিয়ার জেলেদের পাঠিয়েছিলেন।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে একজন বিলাল আহমেদ। তার বাড়ি সিলেট এলাকায়।
চোখের সামনে একের পর এক মানুষ ডুবতে দেখে বিলাল নিজের বাঁচার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে জেলেরা ১৪ বাংলাদেশি, একজন মরক্কোর ও অপর একজন মিসরীয় নাগরিক মেতওয়ালাকে উদ্ধার করেন।
বিলাল বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাগরের হীমশীতল পানিতে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম। চোখের সামনেই নিকটাত্মীয়কে তলিয়ে যেতে দেখছিলাম। একপর্যায়ে সৃষ্টিকর্তা যেন সহায় হন। তিউনিসিয়ার জেলেরা আসেন জীবনের দূত হয়ে।
রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম বলেন, তিউনিসিয়ার জেলেরা যদি তাদের দেখতে না পেতেন, তা হলে আমরা জীবিত কাউকেই পেতাম না আর কখনই এই নৌকাডুবির ঘটনা জানতে পারতাম না।
তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর জার্জিসে রেড ক্রিসেন্টের একটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছেন বিলাল।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানান, ছয় মাস আগে তার ইউরোপ যাত্রা শুরু হয়। অন্য তিনজনের সঙ্গে তিনি আকাশপথে দুবাই প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তুরস্কের ইস্তানবুল। এর পর আরেকটি ফ্লাইটে তাদের লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ত্রিপলিতে তাদের সঙ্গে আরও প্রায় ৮০ বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সবাইকে পশ্চিম লিবিয়ার একটি কক্ষে তিন মাস রাখা হয়।
বিলাল বলেন, আমি ভেবেছিলাম আমি সেখানেই মারা যাব। দিনে একবার খাবার দেয়া হতো, কখনও কখনও কিছুই জুটত না। ৮০ জন মানুষের জন্য ছিল মাত্র একটি টয়লেট। গোসল করতে পারতাম না। কেবল দাঁত পরিষ্কার করতে পারতাম। খাবারের জন্য আমরা কাঁদতাম।
৩০ বছর বয়সী বিলাল জানান, ইউরোপ যাত্রার জন্য জমি বিক্রি করে তার বাবা বাংলাদেশি পাচারকারীর হাতে প্রায় পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে দেন।