শীতের পিঠা বাংলার ঐতিহ্য

আমার নোয়াখালী ডেস্ক
  • আপডেট: ০৪:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 4726

শীতের-পিঠা-বাংলার-ঐতিহ্য-নোয়াখালী-শীতের সকাল

বাংলার নিজস্ব খাদ্য তালিকার ঐতিহ্যে, পিঠাপুলির আভিজাত্য উল্লেখ করোর মতো।

গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নুতন ধান ঘরে তোলার পর পরই পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়।

শীতের সকালে চারদিক মিষ্টি পিঠার ঘ্রাণে মোহিত হয়ে থাকে।

এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ বাংলার পিঠা।

মুখরোচক রসনা জাতীয় খাবরের তালিকায় পিঠা বাঙ্গালীর ঐতিহ্য তুলে ধরে। এছাড়াও পারস্পারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তুলতে পিঠা যেনো আত্মিক মিষ্টি সাঁকো হয়ে জুড়ে আছে আমাদের ইতিহাস ও অস্তিত্বে।

চালের গুঁড়ো আটা-ময়দা অথবা অন্য কোন শস্যেও গুঁড়া ছাড়াও গুড়,চিনি, নারকেলের কোরা হলো অধিকাংশ পিঠার মুল উপাদান।

নারকেলের বিভিন্ন পিঠা গুলোর মধ্যেঃ নারকেলের ভাজা পুলি, নারকেলের নাড়–, নারকেলে জেলাফি, নারকেলের সিদ্ধ পুলি, নারকেলের সন্দেশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও অদ্ভুত সুন্দর নামের ও বেশ মাজাদার কিছু পিঠা রয়েছে যেমন বিবিয়ানা পিঠা বা জামাই ভুলানো পিঠা, সরভাজা পিঠা, পাতা পিঠা, সূর্যমূখী পিঠা, সুন্দরী পাকন পিঠা, পুলি পিঠা, কুলশু পিঠা, আন্দশা পিঠা, হৃদয় হরণ পিঠা, ফুল পিঠা, ঝিনুক পিঠা, দুধরাজ ও রসফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়াও সচরাচর বানানো প্রচলিত পিঠা গুলির মধ্যে পাকান পিঠা, চিতই পিঠা, ভাঁপা পিঠা, মেরা পিঠা, ঝাল পুলি পিঠা ও পাটিসাপটা উল্লেখযোগ্য।

অঞ্চলভেদে এসব পিঠার নামে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া গেলেও পিঠাগুলোর স্বাদে কোন ভিন্নতা নেই। ভিন্নতা নেই অনুভূতির ও আন্তরিকতার। পিঠাকে ঘিরে বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে, আরো উল্লাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে”।            পিঠা নিয়ে নানা রসাত্মক গান ও বাঁধা হয়েছে।

যেমনঃ “তেলেভাজা ছক্কা পিঠা গো গামচা বাঁধা দই সকল জামাই খাইয়া গেল গো আমর ননদের জামাই কই”? তালের পিঠা নিয়ে একটি বিখ্যাত গানের অংশবিশেষ হলঃ “তালের পিঠা বানাইয়া কারে বা খাওয়াই এদিক সেদিক চাইয়া দেখলাম মনের মানুষ নাই”।

শীতের পিঠাপুলি নিয়ে শহরে বাচ্চাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। তাদের কাছে ফাস্টফুডের আইটেম গুলোই বেশি প্রিয়। আমাদের মত উনুনের ধারে মায়ের পাশে বসে, গম গরম পিঠা খাওয়ার মজাটা এদের অজানা। ব্যস্ত সময়ের যাঁতাকলে পড়ে শহুরে মায়েরাও এখন এসব থেকে দূরে থাকলেই বাঁচেন।

যান্ত্রিক জীবনে গ্রামীন অনূভূতি লালন করা মানুষগুলো চাইলেই ইফটিউব ও গুগলে সার্চ দিয়ে শিখে নিতে পারেন আজানা পিঠাগুলোর তৈরির পদ্ধতি। আর এভাবেই আধুনিক শহুরে ব্যস্ত মায়েরা চাইলেই, তাদের সন্তানদের সামনে তুলে ধরতে পারেন আমাদের নিজস্ব এই নান্দনিক ঐতিহ্যকে।

এই অমূল্য ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের।

লেখকঃ মল্লিকা বেগম, পুলিশ লাইন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর নোয়াখালী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

শীতের পিঠা বাংলার ঐতিহ্য

আপডেট: ০৪:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলার নিজস্ব খাদ্য তালিকার ঐতিহ্যে, পিঠাপুলির আভিজাত্য উল্লেখ করোর মতো।

গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নুতন ধান ঘরে তোলার পর পরই পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়।

শীতের সকালে চারদিক মিষ্টি পিঠার ঘ্রাণে মোহিত হয়ে থাকে।

এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ বাংলার পিঠা।

মুখরোচক রসনা জাতীয় খাবরের তালিকায় পিঠা বাঙ্গালীর ঐতিহ্য তুলে ধরে। এছাড়াও পারস্পারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তুলতে পিঠা যেনো আত্মিক মিষ্টি সাঁকো হয়ে জুড়ে আছে আমাদের ইতিহাস ও অস্তিত্বে।

চালের গুঁড়ো আটা-ময়দা অথবা অন্য কোন শস্যেও গুঁড়া ছাড়াও গুড়,চিনি, নারকেলের কোরা হলো অধিকাংশ পিঠার মুল উপাদান।

নারকেলের বিভিন্ন পিঠা গুলোর মধ্যেঃ নারকেলের ভাজা পুলি, নারকেলের নাড়–, নারকেলে জেলাফি, নারকেলের সিদ্ধ পুলি, নারকেলের সন্দেশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও অদ্ভুত সুন্দর নামের ও বেশ মাজাদার কিছু পিঠা রয়েছে যেমন বিবিয়ানা পিঠা বা জামাই ভুলানো পিঠা, সরভাজা পিঠা, পাতা পিঠা, সূর্যমূখী পিঠা, সুন্দরী পাকন পিঠা, পুলি পিঠা, কুলশু পিঠা, আন্দশা পিঠা, হৃদয় হরণ পিঠা, ফুল পিঠা, ঝিনুক পিঠা, দুধরাজ ও রসফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়াও সচরাচর বানানো প্রচলিত পিঠা গুলির মধ্যে পাকান পিঠা, চিতই পিঠা, ভাঁপা পিঠা, মেরা পিঠা, ঝাল পুলি পিঠা ও পাটিসাপটা উল্লেখযোগ্য।

অঞ্চলভেদে এসব পিঠার নামে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া গেলেও পিঠাগুলোর স্বাদে কোন ভিন্নতা নেই। ভিন্নতা নেই অনুভূতির ও আন্তরিকতার। পিঠাকে ঘিরে বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে, আরো উল্লাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে”।            পিঠা নিয়ে নানা রসাত্মক গান ও বাঁধা হয়েছে।

যেমনঃ “তেলেভাজা ছক্কা পিঠা গো গামচা বাঁধা দই সকল জামাই খাইয়া গেল গো আমর ননদের জামাই কই”? তালের পিঠা নিয়ে একটি বিখ্যাত গানের অংশবিশেষ হলঃ “তালের পিঠা বানাইয়া কারে বা খাওয়াই এদিক সেদিক চাইয়া দেখলাম মনের মানুষ নাই”।

শীতের পিঠাপুলি নিয়ে শহরে বাচ্চাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। তাদের কাছে ফাস্টফুডের আইটেম গুলোই বেশি প্রিয়। আমাদের মত উনুনের ধারে মায়ের পাশে বসে, গম গরম পিঠা খাওয়ার মজাটা এদের অজানা। ব্যস্ত সময়ের যাঁতাকলে পড়ে শহুরে মায়েরাও এখন এসব থেকে দূরে থাকলেই বাঁচেন।

যান্ত্রিক জীবনে গ্রামীন অনূভূতি লালন করা মানুষগুলো চাইলেই ইফটিউব ও গুগলে সার্চ দিয়ে শিখে নিতে পারেন আজানা পিঠাগুলোর তৈরির পদ্ধতি। আর এভাবেই আধুনিক শহুরে ব্যস্ত মায়েরা চাইলেই, তাদের সন্তানদের সামনে তুলে ধরতে পারেন আমাদের নিজস্ব এই নান্দনিক ঐতিহ্যকে।

এই অমূল্য ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের।

লেখকঃ মল্লিকা বেগম, পুলিশ লাইন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর নোয়াখালী।