নিউজিল্যান্ডে সেই মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী, খুতবায় যা বললেন ইমাম
- আপডেট: ১০:৫০:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৯
- / 3324
দিনের শুরুটা ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। সপ্তাহান্তের ছুটির দিনের আগে ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দারা নিচ্ছিলেন ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি। কিন্তু দিনের শেষটা হলো রক্তের সোঁদা গন্ধে। শহরে এখন ভয়ের রাজত্ব। রাতটা নিশ্চয়ই নির্ঘুম কাটবে ক্রাইস্টচার্চের, সঙ্গী থাকবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
শান্তির সূচকে বিশ্বজুড়ে সুনাম নিউজিল্যান্ডের। ২০১৮ সালে শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশটি। এমন একটি দেশেই শুক্রবার দুপুরে এক মসজিদে হলো নারকীয় সন্ত্রাসী হামলা। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪৯, আহত ৪৮। এর মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশিও রয়েছেন। হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন অনেকে।
এদিকে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চে আল-নুরসহ দু’টি মসজিদে ঢুকে ভয়াবহ হামলার পর প্রথমবারের মতো সরাসরি টিভি সম্প্রচারের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করল মুসলমান নারী ও পুরুষ। সেই সাথে ২ মিনিট নিরবতাও পালন করা হয় দেশব্যাপী।
নামাজে ইমামের আবেগময়ী বক্তব্যে মুখরিত হয় লাখো মানুষ। এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্নসহ হাজার হাজার মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশনে আজান প্রচারের পর দেশটি জুড়ে নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া মুসলিমদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আজ নিউজিল্যান্ডের অন্য ধর্মের নারীরা মাথায় হিজাব পরেছেন।
মসজিদটির ইমাম জামাল ফাওদা তার খুতবায় যা বলেছেন, সংক্ষিপ্তাকারে এখানে দেয়া হলো-
গত শুক্রবার আমি এ মসজিদটিতে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন এক সন্ত্রাসীর চোখেমুখে ঘৃণা ও ক্ষোভ দেখেছি। এতে অর্ধশত মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪২ জন। এতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের হৃদয়ে কষ্ট পেয়েছেন।
আজ একই স্থানে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশে তাকিয়েছি, তখন নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের চোখে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখতে পেয়েছি। এতে আরও লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ভরে গেছে, যারা আমাদের সঙ্গে এখানে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু আত্মীকভাবে আছেন।
সন্ত্রাসী আমাদের দেশকে শয়তানি মতাদর্শ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে হতাশ করে দিয়েছে।
কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একেবারে অবিচ্ছেদ্য। বিশ্ব ভালোবাসা ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখতে পারে।
আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে কাউকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেব না।
শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের শয়তানি মতাদর্শ এই প্রথম আমাদের আঘাত হানেনি। কিন্তু এটি আমাদের কঠিন আঘাত দিয়েছে। এতগুলো লোককে হত্যা সাধারণ কিছু নয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সংহতি অসাধারণ।
হতাহতদের পরিবারগুলোকে আপনাদের ভালোবাসা, তাদের মৃত্যুকে বিফলে যেতে দেয়নি। তাদের রক্ত আশার বীজে পানি ঢেলে দিয়েছে। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী ইসলামের সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন। আমাদের ঐক্যের সৌন্দর্যও।
তারা আমাদের কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন। আমাদের সুন্দর দিনগুলো, স্থানগুলো ও কার্যক্রম থেকে তাদের কেড়ে নেয়া হয়েছে।
তারা কেবল ইসলামের শহীদ নন, তারা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আপনাদের হারিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ঐক্য ও তেজ জোরদার হয়েছে। আপনাদের চলে যাওয়া কেবল নিউজিল্যান্ডকেই সজাগ করেনি, বিশ্ব মানবতাকেও জাগিয়ে তুলেছে।
এখানে এ জমায়েতে বৈচিত্র্যের এই ছায়াগুলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ মানবিতার ইচ্ছারই প্রকাশ। একটি উদ্দেশে হাজার হাজার মুসল্লি এখানে জমায়েত হয়েছেন, তা হচ্ছে- ঘৃণামুক্ত থাকা। কেবল ভালোবাসাই আমাদের উদ্ধার করতে পারে।
নিউজিল্যান্ডের লোকজন ধন্যবাদ। আপনাদের চোখ থেকে যে পানি ঝরছে, সে জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনাদের হাকার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের ফুলের জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা।