যে কোনো প্রতিযোগিতায় ভারতকে হারানো মানেই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু। আর সেটা যদি হয় কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে তাহলে তো কথাই নেই। তেমনই এক উপলক্ষ্য উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। ভারতকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্টত্বের মুকুট ধরে রেখেছে টাইগার জুনিয়াররা।
বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন ইকবাল হোসেন ইমন ও আল ফাহাদ। হাত ঘুরিয়ে সাফল্য এনে দিয়েছেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিমও। মামুলি পুঁজি নিয়েও ভারতকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপার উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববারের ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়েছে লাল-সবুজের দেশটি। ১৯৮ রানের পুঁজি নিয়েও বোলারদের নৈপূণ্যে প্রতিযোগিতার সফলতম দলটিকে ৩৫.২ ওভারে স্রেফ ১৩৯ রানে গুটিয়ে দেয় তারা।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় শিরোপা। গত বছর ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল দলটি।
সর্বোচ্চ ৮বার এই শিরোপা জিতেছে ভারত। যুব এশিয়া কাপে নয়বার ফাইনাল খেলে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে নিতে পারল না তারা।
এবারের জয়ে একটা প্রতিশোধও নেওয়া হলো বাংলাদেশের। ২০১৯ আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেই শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল লাল-সবুজের দলটি।
তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ইমন ও আজিজুল। দুটি নিয়েছেন আল ফাহাদ। একটি করে শিকার ধরেছেন মারুফ মৃধা ও রিজান হোসেন।
২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের নায়ক ইমন। ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরাও এই পেসার।
বল হাতে দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্যা এনে দেন ফাহাদ। আয়ুশ মাত্রেকে বোল্ড করে দেন এই ডানহাতি পেসার। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আইপিএলে দল পেয়ে হুলুস্থুল ফেলে দেওয়া বৈভব সূর্যবংশীকেও টিকতে দেননি আরেক পেসার মারুফ মৃধা।
লড়াই করেও শুরুর ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। ভারতীয় ইনিংসে ২০ রান যোগ হতেই আবারও উইকেটের উদযাপনে মাতে বাংলাদেশের যুবারা। এবার উইকেট শিকারে যোগ দেন রিজান হোসেনও। ৩৫ বলে ২০ রান করা আন্দ্রে সিদ্ধার্তর স্টাম্প ছিটকে দেন তিনি।
এরপর ভারতকে একাই টানছিলেন দলটির অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান। প্রথমে কেপি কার্তিকেয়াকে নিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। তবে ২১তম ওভারে তিন বলের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচটিকে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় তুলে দেন আরেক পেসার ইমন।
উইকেটের পিছন থেকে দুটি ক্যাচই নেন কিপার ফরিদ হাসান। কার্তিকেয়ার (২১) পর ফেরেন নতুন ব্যাটার নিখিল কুমার (০)। নিজের পরের ওভারে হরবংশ পাঙ্গুলিয়াকেও ফরিদের গ্লাভসে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন ইমন। তিন ওভার পর আল ফাহাদ আরেকটি উইকেট নিলে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৯২/৭।
তখনও টিকে ছিলেন আমান। বাকি তিন উইকেট তুলে নেন আজিজুল। বল হাতে এসেই প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। অফ স্পিনে নিজের পরের দুই ওভারেও বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়ে গুটিয়ে দেন প্রতিপক্ষকে। বাংলাদেশ মেতে ওঠে শিরোপার উল্লাসে।
এর আগে টসে হেরে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৭ রানে ওপেনার কালাম সিদ্দিকিকে হারায় দল। ১৬ বলে স্রেফ ১ রান করেন কালাম। আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরারের সাথে অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের জুটিও জমে ওঠেনি। জাওয়াদ পেরেন ৩৫ বলে ২০ রান করে।
একটি করে ছক্কা-চারে ভালো কিছুর আভাস দিয়েও বেশিক্ষণ টেকেননি দলপতি আজিজুলও (২৮ বলে ১৬)। এরপর মোহাম্মদ শিহাব জেমস ও রিজান হোসেনের ব্যাটে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ।
৬৭ বলে ৪০ রান করা শিহাবের বিদায়ে ভাঙে ৬২ রানের জুটি। মাত্র ৩ বল টেকেন দেবাশিষ দেবু। এরপর ফরিদ হাসানের সাথে ২৩ রানের জুটি গড়ে আউট হন রিজান, ৬৫ বলে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে।
পরে বাংলাদেশ লড়াইয়ের মতো পুঁজি দাড় করাতে পারে ফরিদের ব্যাটে। এই কিপার-ব্যাটার ৪৯ বলে ৩ চারে করেন ৩৯ রান। ৫ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১৯ বলে ১১ রানে অপরাজিত থেকে যান মারুফ মৃধা। শেষ পর্যন্ত এই রানই টপকাতে পারেনি ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ (জাওয়াদ ২০, কালাম ১, আজিজুল ১৬, শিহাব ৪০, রিজান ৪৭, দেবাশিস ১, ফরিদ ৩৯, সামিউন ৪, আল ফাহাদ ১, মারুফ ১১*, ইমন ১; ইউধাজিত ৯.১.-১-২৯-২, চেতান ১-০-০-৪৮-২, নিখির ৫-১-১৩-০, কিরান ৭-০-১৯-১, হার্দিক ১০-০-৪১-২, কার্তিকেয়া ৭-০-৩৭-১, আয়ুশ ১-০-৯-১)।
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯: ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ (আয়ুশ ১, বৈভাব ৯, সিদ্ধার্থ ২০, কার্তিকেয়া ২১, আমান ২৬, নিখিল ০, হারভানশ ০, কিরান ১, হার্দিক ২৪, চেতান , ইউধাজিত ; মারুফ ৬-০-২৩-২, ফাহাদ ৮-০-২৩-১, রিয়াজ ৮-২-১৩-০, ইমন ৭-১-২৪-৪, সামিউন ৫-০-১৫-০, আজিজুল ২.২-১-৮-৩)।
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৫৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইকবাল হোসেন ইমন।